Career Planning: ভবিষ্যতে কোন পেশা বেছে নেব?
Career Planning: ভবিষ্যতে কোন পেশা বেছে নেব?
“তোমাকে দিয়ে কিছু হবেনা”, “এই পেশা তে যাওয়া এত সহজ না”, “এই পেশা কি ভালো ভবিষ্যৎ দিবে?”- এধরণের পারিপার্শ্বিক মন্তব্য কতোই তো শুনতে হয় আমাদের অনেককে। মন্তব্যগুলো আমাদের অজান্তেই মনে এমনভাবে গেঁথে যায় যে, এর থেকে বেরোনোর চিন্তাশক্তিও হারিয়ে ফেলি আমরা। ফলস্বরুপ আমরা সৃষ্টিশীল কাজগুলোকে ছুঁড়ে ফেলে শুধু ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার উদ্দেশ্যে পড়ালেখায় ঝাঁপ দেই।
এধরনের মানসিকতাই আমাদের নিজের পছন্দ অনুযায়ী পেশা নির্বাচনে বাঁধা দেয়। বোর্ড এক্সাম, এডমিশন টেস্টের পেছনে অন্ধভাবে দৌড়াতে দৌড়াতে এক পর্যায়ে নিজের আগ্রহের জায়গাগুলো হারিয়ে ফেলি। যার কারণে যখন কাউকে প্রশ্ন করা হয় কী হতে চাও, এর উত্তর দিতে বেশ কাঠখড় পোড়াতে হয়। এ কারণে ক্যারিয়ার-সচেতন হওয়া ও ভবিষ্যৎ পেশা নির্বাচনের চিন্তাভাবনা স্কুলজীবন থেকেই শুরু করা উচিত বলে মনে করি। চলো জেনে নেই ক্যারিয়ার কাকে বলে ও ভবিষ্যৎ পেশা নির্বাচনে কী কী বিষয় লক্ষ রাখা দরকার।
ক্যারিয়ার কাকে বলে ও পেশা কি ?
আমাদের অনেকের এখনো স্পষ্ট ধারণাই নেই যে ক্যারিয়ার কী। ক্যারিয়ার বলতে সাধারণত বোঝায় পেশাজীবন। একজন মানুষ উপার্জনের জন্য যেই পথ বেছে নেয়, সেটাই তার ক্যারিয়ার। এই ক্যারিয়ার হতে পারে একজন শিক্ষক হিসেবে, একজন চিকিৎসক কিংবা কাঠমিস্ত্রী হিসেবে, একজন আঁকিয়ে, মাঝি, কিংবা চাকুরীজীবী হিসাবে।
অনেকের মতে স্মার্ট ক্যারিয়ার মানেই চাকুরি। এর বাইরে যে চমৎকার আরও অনেক পেশা আছে, তা আমরা জানিই না। সবার কথা শুনে যখন একটা ক্যারিয়ার পথ বেছে নেই, দেখা যায় কাজ করতে গিয়ে তা আর ভালো লাগছে না। পেশা হয়ে পড়েছে বোঝা। গবেষণায় দেখা গেছে, আমেরিকাতে একজন মানুষ গড়ে ৩ বার তার ক্যারিয়ার পথ পালটায়। কিন্তু বাংলাদেশে সেটা চাইলেও সম্ভব হয় না, কারণ আমরা শুধু মাত্র একটা কাজের জন্যই তৈরি হই, আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থা আমাদের এটাই শেখায়।
ক্যারিয়ার কি ?
সায়েন্সে পড়লে বুয়েট কিংবা মেডিকেল, কমার্সে পড়লে বিবিএ আর আর্টসে পড়লে আইন- এই হলো সংক্ষেপে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা। এটা যেন একটা সার্বজনীন স্বীকৃত সমাজের আদর্শ শিক্ষার মানদন্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাও সেটা তো অনার্স পড়ার পর্যায়ে গিয়ে, এর আগে? এসএসসি কিংবা এইচএসসি পর্যায়ের কোন শিক্ষার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা পরিমাপ করা হয় সে বিজ্ঞান বিভাগে পড়ছে কিনা, তা দিয়ে।
অপেক্ষাকৃত একটু দুর্বল যারা, তারাই না মানবিক কিংবা ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে পড়বে! আর অনার্স পাস করার ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বাদে আর বাদ বাকি সকল শিক্ষার্থীর গন্তব্য হচ্ছে বিসিএস। কখনও তো চার বছর ইঞ্জিনিয়ারিং পড়েও শেষে গিয়ে বিসিএস এর এডমিন ক্যাডারের পিছনে ছুটতে দেখা যায় কাউকে। ছুটবেই বা না কেন? বিসিএস পাস করা যে কারো জয়ধ্বনি সবখানে।
এভাবে আর কতদিন চলবে আমাদের দেশ? হ্যাঁ, আমাদের ডাক্তার ,ইঞ্জিনিয়ার লাগবে। ধরে নিলাম যে, পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ডাক্তার আর ইঞ্জিনিয়ার আমাদের দেশেই তৈরী হচ্ছে। তাও সেটা কি জাতিগতভাবে এগিয়ে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট? শুধু ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার দিয়ে আমরা জাতিগতভাবে কতদূর যাব? আমাদের দরকার শিক্ষক, উকিল, গায়ক, নায়ক, খেলোয়াড়, চিত্রশিল্পী, বিজ্ঞানী, রাজনীতিবিদ, রংমিস্ত্রী- সব পেশার যোগ্যতাসম্পন্ন মানুষ।
এই যে ছকবাঁধা প্রচলনগুলো হয়ে গিয়েছে আমাদের সমাজে, এর পেছনে অবশ্য যথার্থ কিছু কারণ আছে। এখানে পাঁচটি অন্যতম বিশেষ কারণ আলোচনা করছি।
পঠিত বিষয় সম্পর্কিত চাকুরী না থাকা:
মেডিকেল বা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার পেছনে অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে এর সাথে সরাসরি চাকুরীর ব্যাপারটি জড়িত। বিশেষ করে মেডিকেল পড়লে ডাক্তার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার সম্ভাবনা প্রায় শতভাগ। ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে ইঞ্জিনিয়ার হওয়াটাও সরাসরি পঠিত বিষয়ের সাথে জড়িত। আর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও বেশিরভাগ বিবিএ পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের দ্বারাই চলছে বিবিএ পরবর্তী চাকুরীর বাজারের সুবাদেই। এসব বিষয়ে পড়া প্রত্যেকেই মোটামুটি জানে তাদের পেশা কি হবে। অথচ প্রত্যেকটা বিষয় সম্পর্কিত চাকুরীক্ষেত্র থাকলে এই ব্যাপারটা ঘটত না।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা ছাড়া অন্য কোন দক্ষতা প্রমাণের সুযোগ নেই:
অনেক দেশেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই খেলাধুলা, আর্ট কিংবা মিউজিক এর জন্য আলাদা শিক্ষক থাকে। যিনি শুধুমাত্র আনুষ্ঠানিকতার জন্যই না, বরং বাস্তব অর্থেই প্রতিটা শিক্ষার্থীর ঐসব বিষয়ের দক্ষতা যাচাই করে দেখেন। যদি সত্যিই কোন শিক্ষার্থীর মধ্যে সম্ভাবনা দেখা যায়, তবে তাকে সেভাবেই গড়ে তোলা হয়।
আমাদের দেশে এমন সুযোগ নেই যে, শিক্ষার্থীরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় খেলাধুলা, আর্ট, কিংবা গানে বিশেষ পারদর্শী হয়ে উঠবে। অন্যান্য দেশে যেরকম কারিকুলামের মধ্যেই এসব বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকে, আমাদের দেশে বরং কোন কোন শিক্ষক পড়াশোনা বাদে অন্য কিছু না করতেই উৎসাহিত করে থাকেন। অথচ,
অল্প বয়সেই একজন শিক্ষার্থী স্বপ্ন দেখতে শেখে।
স্কুল-কলেজে বিজ্ঞান বিভাগের সাথে অন্যান্য বিভাগের শিক্ষার মান ও ফলাফলে পার্থক্য:
বেশিরভাগ স্কুল-কলেজেই বিজ্ঞান বিভাগের সাথে অন্যান্য বিভাগের গুণগত পার্থক্য থাকে। বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য সুযোগ সুবিধা থাকে অনেক বেশি। এই কারণেই “ভাল-ছাত্ররা” বিজ্ঞান বিভাগে পড়ার সুযোগ লাভ করে থাকে। আর বোর্ড পরীক্ষাতেও বিজ্ঞান বিভাগ থেকে প্রাপ্ত জিপিএ পাঁচ এর সংখ্যা বেশি থাকে বিধায় অনেকে জিপিএ পাঁচ পাবার লোভে বিজ্ঞান পড়ে।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণা ও অন্যান্য পর্যাপ্ত সুবিধা না থাকা:
বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা না থাকায় অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী প্রতিভা থাকা সত্ত্বেও হয়তো অনেক সম্ভাবনা থেকে বঞ্চিত হয়। যেমন বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় যেসব শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে, তাদের মধ্যে অনেকেরই হয়তো নতুন কিছু নিয়ে গবেষণা বা উদ্ভাবনের প্রতিভা রয়েছে।
কিন্তু পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধার অভাবে যখন তারা সেটা করতে পারে না, তখন তারাও গতানুগতিক চাকুরীজীবনের দিকেই ধাবিত হয়। অথচ আমাদের দেশেরই সন্তান উচ্চশিক্ষার জন্য অন্য কোন দেশে গিয়ে পর্যাপ্ত সুবিধা লাভ করার পর সাক্ষরতার প্রমাণ রাখতে সক্ষম হয়।
ভালো শিক্ষার্থীদের শিক্ষকতা পেশা কে বেছে না নেওয়া:
বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে অনেক ভাল শিক্ষার্থী শিক্ষকতা করলেও প্রাথমিক বা মাধ্যমিক স্কুল পর্যায়ের শিক্ষকদের মধ্যে খুব কম সংখ্যক ব্যক্তিই স্বেচ্ছায় চাকুরীটি বেছে নেন। এর কারণ অবশ্যই কম বেতন এবং যথাযথ সম্মানের অভাব। অথচ ঠিক ঐ পর্যায়ের শিক্ষকের প্রভাবই একটা শিক্ষার্থীর উপর সবচেয়ে বেশি থাকে। আর ঐ অল্প বয়সেই একজন শিক্ষার্থী স্বপ্ন দেখতে শেখে। সবচেয়ে ভাল শিক্ষার্থীরা শিক্ষকতা করলে স্বপ্নগুলো অঙ্কুরেই বিনষ্ট হত না।
ক্যারিয়ার প্ল্যানিং: যেভাবে করবে পেশা নির্বাচনের পরিকল্পনা
অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, অনেকে একখনো জানেনই না ক্যারিয়ার কাকে বলে। আর অনেককেই হা-হুতাশ করতে দেখা যায় যে ক্যারিয়ার প্ল্যানিং করবে কিভাবে। দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভুগছো যারা, তাদের জন্য মূলত এই লেখা। চলো দেখে নেয়া যাক ক্যারিয়ার প্ল্যানিং এ লক্ষ্য পূরণের জন্য কীভাবে আমরা এই ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার নকশা তৈরি করব-
অভিজ্ঞদের পরামর্শ নাও:
ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার নকশা তৈরির পূর্বে সবচেয়ে ভালো কাজ হচ্ছে, তোমার ক্ষেত্রের যারা অভিজ্ঞ আছেন তাদের কাছ থেকে পরামর্শ নেয়া। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে যে, তুমি যদি কোনো বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করে থাকো, তবে যারা ইতিমধ্যে সে বিষয়ে পড়াশোনা শেষ করে ফেলেছেন এবং বিভিন্ন জায়গায় কাজ করছেন – তাদের কাছ থেকে পরামর্শ নাও। কর্মক্ষেত্রে যারা আছেন, তাদের অনেক আগেই যোগদান করেছেন। তাদের কাছে অভিজ্ঞতা ধার নেয়া যায়। ক্ষেত্রের অভিজ্ঞদের কাছ থেকে পরামর্শ নিলে, তাদের অভিজ্ঞতার কথা শুনতে চাইলে সেগুলো অনুসরণ করে তুমিও তোমার কাজে অভিজ্ঞ হয়ে দক্ষতার ছাপ রাখতে পারবে।
ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার আলোকে নকশা বানাও:
অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের সাথে সাক্ষাৎকারের সময় নোট নাও। পরবর্তীতে সেই নোটগুলো দেখে তারা কী কী বলেছেন তা মনে করার চেষ্টা করো এবং তারা যে অভিজ্ঞতাগুলোর কথা বলেছেন সেগুলো আলাদা করে সাজিয়ে লিখে ফেলো। সবার কাছ থেকে যে অভিজ্ঞতাগুলোর কথা জেনেছো,তোমার পেশা কি হবে- নির্ধারণে এ সেই সবগুলো অভিজ্ঞতাই যে কাজে লাগবে কিংবা দরকার হবে এমন কোনো কথা নেই। তোমার লক্ষ্য পূরণে যে অভিজ্ঞতাগুলো ক্যারিয়ার প্ল্যানিং এর জন্য সবচেয়ে বেশি সাহায্যকারী হবে সেগুলো বেছে নিতে হবে।
এমনকি তুমি যদি উদ্যোক্তা হতে চাও তবে যারা ইতিমধ্যে উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ করা শুরু করেছেন তাদের কাছ থেকে পরামর্শ নিতে পারো। সেক্ষেত্রে তাদের ব্যবসার উৎপাদন, উত্থান-পতন কিংবা কীভাবে বিভিন্ন দলকে পরিচালনা করতে হয় সেই অভিজ্ঞতাগুলো সম্পর্কে জানতে পারবে। সেগুলোকে পরে যখন যেভাবে লাগে সেভাবে কাজে লাগাতে পারবে।
বলা হয়ে থাকে যে, মানুষ তার চিন্তার মতই বিশাল এবং শক্তিশালী। তুমি যদি ক্যারিয়ারে লক্ষ্য পূরণ করতে চাও সেক্ষেত্রেও এই কথাটি অনুসরণ করো। কেননা লক্ষ্য পূরণের জন্য প্রথমেই তোমাকে যে কাজটি করতে হবে সেটি হচ্ছে তোমার চিন্তা স্থির করতে হবে যে তুমি কতটা দক্ষতার সাথে কাজ করতে চাও, কত বেশি অভিজ্ঞতা অর্জন করে লক্ষ্যে পৌঁছাতে চাও। তুমি যদি চিন্তা একবার সঠিকভাবে স্থির করে ফেলো, তবে শত বাধা আসলেও তোমার লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবে।
অবশ্য এজন্য হয়ত আশেপাশের অন্যদের চাইতে একটু বেশিই পরিশ্রম করতে হতে পারে। হয়ত অনেক সময় রাত জেগে কাজ করতে হতে পারে, অনেক পছন্দের কাজ বাদ দিতে হতে পারে। অনেক সময় হয়ত বন্ধুদের সাথে আড্ডা কিংবা পরিবারের সাথে অতিরিক্ত সময় দেয়ায় কিছুদিনের জন্য বিরতি দিতে হতে পারে।
বলা হয়ে থাকে লক্ষ্য পূরণের একটা বিশাল অংশই নির্ভর করে আমরা কীভাবে আমাদের আশেপাশে পরিবর্তন আনতে পারছি। এর জন্য আমাদের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি করে কাজ শুরু করে দিতে হবে। বিখ্যাত বই ‘দ্য মিরাকল মর্নিং’ এ বলা হয়েছে,
“The degree to which you have the ability to change or create anything is precisely equal to the degree of responsibility you shoulder for everything in your life.”
অর্থাৎ আমাদের আশেপাশে যতকিছু হচ্ছে সেগুলোর মাঝে যত বেশি কিছুর দায়িত্ব আমরা আমাদের ঘাড়ে নেব, তত বেশি আমরা আমাদের আশেপাশে আমরা যা চাই তা ঘটাতে পারব। মানে হচ্ছে, আমরা যদি ক্যারিয়ার এর শুরু থেকেই অনেক বেশি দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে থাকি, তবে আমরা খুব সহজেই আমাদের কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারব।
ভবিষ্যতে কোন পেশা বেছে নেব?
ভবিষ্যৎ পেশা নির্বাচনের চিন্তাভাবনা স্কুলজীবন থেকেই শুরু করা উচিত। চলো এবার জেনে নেই ভবিষ্যৎ পেশা নির্বাচনে কী কী বিষয় লক্ষ রাখা দরকার।
১। নিজেকে যাচাই করা
সঠিক পেশা নির্বাচনে প্রথম ধাপ হলো নিজেকে যাচাই করা। অর্থাৎ নিজের আগ্রহের জায়গাগুলো খুঁজে বের করা, স্বাভাবিক ক্ষমতা, ছোটবড় দক্ষতা, ব্যক্তিত্ব ইত্যাদি যাচাই করা। এরপর সেই অনুযায়ী পেশা নিয়ে চিন্তাভাবনা করা। জীবনে সফল হতে হলে এমন কাজ বেছে নেয়া উচিত যেই কাজ আগ্রহ কিংবা ভালোবাসা থেকে করা যায়! এতে সেই নির্দিষ্ট কাজকে কখনো ‘কাজ’ মনে হবে না, অযথা একঘেয়েমি জেঁকে বসবেনা।
আগ্রহের জায়গাটি খুঁজে বের করার সবচেয়ে সহজ একটি উপায় হলো, চোখ বন্ধ করে কল্পনা করো যদি তোমাকে কখনো কোনো কাজ করতে না হতো তবে তুমি কী করতে? এই প্রশ্নের উত্তর থেকেই তুমি নিজেই যাচাই করে নিতে পারবে আসলে কোণ কাজটি তোমার সবচেয়ে প্রিয়। সেই কাজটির সাথে কোন ক্যারিয়ারের অপশনটি মিলে যায়, তা ভেবে বের করে ফেলো!
২। কাজের ধরন এবং পরিবেশ নির্ধারণ
পেশা নির্বাচনের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, কাজের পরিবেশ নির্ধারণ করা। তোমাকে ভেবে দেখতে হবে তোমার সুবিধাজনক পজিশন কীরকম অর্থাৎ কোন পরিবেশে কাজ করতে স্বচ্ছন্দ বোধ করবে তুমি। যেমন, যারা ঘরে বসে নিরিবিলি কাজ করার পক্ষে তারা ফ্রিল্যান্সিং এর মত পেশা বেছে নিতে পারো। আবার যারা এক্সট্রোভার্ট, যারা মানুষের সাথে মিশতে কথা বলতে পছন্দ করো এবং যোগাযোগ দক্ষতা ভালো তারা মার্কেটিং এবং অন্যান্য কর্পোরেট জবের দিকে ঝুঁকতে পারো।
৩। লিস্ট করা
নিজেকে যাচাই করার জন্য বেশ কিছু ওয়েবসাইট কিংবা অ্যাপ আছে যেমন, PathSource, Skills matcher, Socanu, O*NET Interests Profiler, Keirsey Temperament Sorter ইত্যাদি। এখানে কিছু প্রশ্নের উত্তর দিয়ে জেনে নেয়া যাবে নিজের ব্যক্তিত্ব, আগ্রহের জায়গাগুলোকে। তাছাড়া সেই অনুযায়ী যত পেশা আছে তার ধারণা পাওয়া যাবে। টেস্টগুলো করার পর আগ্রহের সাথে মিল রেখে বেশ কিছু ক্যারিয়ার অপশনের সাজেশন দেখতে পারবে। এমনকি সেই পেশায় যেতে হলে কোন কোন পথ অবলম্বন করতে হবে তাও জেনে নিতে পারবে। তবে যেকোনো একটা টেস্ট না নিয়ে বিভিন্ন ক্যারিয়ার টেস্ট অ্যাপ ব্যবহার করে কয়েকটি ফলাফল যাচাই করার মাধ্যমে একটি লিস্ট তৈরি করে নিতে পারো।
এবার একটু লিস্ট এ চোখ বুলিয়ে দেখো তো, পছন্দের কোনো পেশা খুঁজে পাও কিনা?
এমন কাজ যদি থাকে যেগুলো করতে অনীহা কাজ করছে তবে সেগুলো লিস্ট থেকে ছাঁটাই করে ফেলো। এরপর একটি শর্ট লিস্ট করে ফেলো যেখানে সর্বোচ্চ পাঁচটি পেশার নাম থাকবে।
৪। রিসার্চ করা
ঐ নির্দিষ্ট বিষয় বা পেশাগুলো সম্পর্কে গভীরভাবে জানতে হবে অর্থাৎ রিসার্চ করতে হবে। এক্ষেত্রে দারুন একটি উপায় হলো ওই পেশায় কর্মরত মানুষের সাথে ব্যক্তিগতভাবে কথা বলা, যেটাকে বলা হয় ‘ইনফরমাল ইন্টারভিউ’ নেয়া। পাশাপাশি ঐ পেশার কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ সম্পর্কে ধারণা পেতে সেখানে সরাসরি যেয়ে কথা বলতে পারো। তবে অবশ্যই ঐ ব্যক্তির এপয়েন্টমেন্ট নিয়ে সময় হাতে নিয়ে যেতে হবে। এতে কাজের ধরন, পরিবেশ সবকিছু সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে। এরপর সবকিছু যাচাই করে পছন্দের পেশাটিকে বেছে নিতে হবে যাকে লক্ষ্য হিসেবে রেখে পড়াশুনা, এক্সট্রা কারিকুলার এক্টিভিটি চালিয়ে যেতে হবে।
একজন সফল ফ্রিল্যান্সার হওয়ার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বিস্তারিত গাইডলাইন।
আন্তজার্তিক ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস (যেমন: Upwork, Fiverr) এ নিজের প্রোফাইল তৈরি এবং কাজ পাবার উপায়।
সম্পূর্ণ কোর্সটি দেখুন
৫। শর্ট টার্ম ও লং টার্ম প্ল্যানিং
পেশা বেছে নেয়ার পর প্রয়োজন কিছু ছোট ও বড় গোল নির্ধারণ করা। গোলগুলোকে দুইটি ভাগে ভাগ করে নিতে হবে-লং টার্ম ও শর্ট টার্ম। মূল উদেশ্যে পৌছানোর জন্য যেসকল ধাপ পার করতে হবে, যেসকল দক্ষতা অর্জন করা প্রয়োজন সেগুলোকে শর্ট টার্ম প্ল্যানিং এর আওতাভুক্ত করতে হবে। সাধারণত যেসকল কাজ ৫-৬মাসের মধ্যে সম্পন্ন করা সম্ভব সেগুলোকে শর্ট টার্মে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এর পরের ধাপগুলো যেগুলো সম্পন্ন করতে ৩-৫বছর লাগতে পারে সেগুলোকে লং টার্ম প্ল্যানিং এ সাজিয়ে একটি খসড়া তৈরি করতে হবে যা লক্ষ্যে পৌঁছার জন্য এক ধরনের রোডম্যাপ হিসেবে কাজ করবে। তাছাড়া মূল লক্ষ্যে পৌঁছানোর পুরো প্রক্রিয়াতে কি কি বাধা-বিপত্তি আসার সম্ভাবনা রয়েছে সেগুলোও খসড়া পরিকল্পনায় টুকে রাখতে পারো। এভাবে একটি ক্যারিয়ার একশন প্ল্যান তৈরি করে ফেলো এবং সেই রোডম্যাপ অনুসরণ করে এগিয়ে যাও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যের দিকে।
দেখবে, লক্ষ্য স্থির করার পর দেখবে তুমি দ্বিগুণ উৎসাহে কাজ করতে পারছো! আত্মবিশ্বাস নিয়ে এগিয়ে গেলেই যেকোনো কাজে সফল হওয়া সম্ভব।